ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জীবনী

Biography Dr. Sarvepalli Radhakrishnan 


ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ছিলেন একজন জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, মহান দর্শনিক এবং হিন্দু চিন্তাবিদ। দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ও ভারতরত্ন দিয়ে তাকে ভূষিত করা হয় ১৯৫৪ সালে। সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনি প্রথম ব্যক্তি। এই মহান ব্যক্তির জন্মদিন ৫ ই সেপ্টেম্বর  সারা দেশ শিক্ষক দিবস হিসাবে পালিত করা হয়।

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জন্মদিন উপলক্ষে ওনাকে সম্মান জানিয়ে উনার জীবনের কিছু অংশ আপনাদের সামনে আর তুলে ধরবো।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ৫ ই সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি (বর্তমান  তামিলনাড়ু) তিরুট্টানী গ্রামে এক তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ। তার পিতার নাম ছিল সর্বপল্লী বীর স্বামী। এবং মায়ের নাম ছিল সর্বপল্লী সীতাম্মা।

শিক্ষা জীবন:

বাল্যকাল থেকেই ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার বাবা দরিদ্র ছিলেন বলেই তার শিক্ষা বৃত্তির টাকার মাধ্যমেই নিজের পড়াশোনা চালাতেন। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু তার গ্রামের এক বিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে তিনি তিরুপতি লুথারণ  খ্রিস্টান মিশন স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ১৮৯৪ থেকে ১৯০০ সাল থেকে শিক্ষা অর্জনের পর  ভেলোরের এক কলেজের শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মাদ্রাজ-খ্রিস্টান কলেজে পরবর্তীতে শিক্ষা শেষ করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি দর্শন শাস্ত্র বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর করেন তার বিষয় ছিল বেদান্ত দর্শনের বিমুর্ত পূর্বকল্পনা। শিক্ষাক্ষেত্র আজীবন কাল তিনি বৃত্তি লাভ করেন।

কর্মজীবন: 

ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এমএ পাস করার পর 1909 সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের সহকারী বক্তার পদ লাভ করেন। কলেজে কর্মরত থাকাকালীন তিনি হিন্দু দর্শনে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। যেমন উপনিষদ, ভগবত গীতা, ব্রহ্মসুত্র শংকর রামানুজা এছাড়াও তিনি বৌদ্ধ জৈন দর্শন এবং প্লেটো লোটিনা ক্যান্ট ব্রডলির মতো পাশ্চাত্য চিন্তাবিদদের দর্শনগুলি সাথেও তিনি পরিচিত ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয় দর্শনের উপর অধ্যাপনা করেন। এ সময়ে তিনি বিভিন্ন পত্রপত্র পত্রিকা লেখালেখি ও করতেন। সে সময়ে তিনি লেখেন তার প্রথম গ্রন্থ’দা ফিলোসফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর ‘ ১৯২০ সালে প্রকাশিত তা দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘ দা রেন্ট অফ রিলিজিয়ান ইন কন টেম্পোরারি’ ১৯২১ সালে রাধা কৃষ্ণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শনে অধ্যক্ষ হিসেবে মনোনীত হন। ১৯২৩ সালে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর লেখা পুস্তক ” ভারতীয় দর্শন” প্রকাশিত হয় যা একটি দার্শনিক ক্লাসিক এবং সাহিত্যের উৎকৃষ্ট অবদান রেখেছে।

রাজনৈতিক জীবন:

পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর রাজনৈতিক জীবনী সূচনা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতে স্বাধীনতা লাভ করলে জহরলাল নেহেরু সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন সেভিয়েত ইউনিয়নের সাথে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কূটনৈতিক কাজ গুলি সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ জানালে। তিনি স্বমহিমায় কথা মান্যতা দিয়ে কাজে লিপ্ত হন। এক সময় তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৮৯ ৫০ সাল পর্যন্ত গণপরিষদের সদস্য হিসাবে ও কাজ সম্পাদনা করতেন। তার সফল শিক্ষাজীবনের পর রাজনীতিতেও কর্মকাণ্ড ও আচরণের ভূয়সী  প্রশংসার অধিকারী হন। সংসদে একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেন।

বিবাহিত জীবন: 

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ১৯০৩ সালের ১৬ বছর বয়সে শিবকামুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন তার স্ত্রীর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। তিনি ইংরেজি এবং তেলেগু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ১৯০৮ সালে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন।

পুরস্কার সম্মান: 

আদর্শ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, রাজনৈতিকবিদ ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি 1933 থেকে 1937 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাঁচবার সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ একাডেমির ফেলো হিসাবে মনোনীত হন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন পুরস্কার পান। ওই বছরই তিনি জার্মানি বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের সাম্মানিক পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬১ সালে জার্মান বুক টেড তত্ত্ববোধনে পেয়েছেন শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৭৮ সালে পেয়েছেন সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার।

অবদান: 

শিক্ষ প্রসারের ক্ষেত্রে ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর অবদান অপরিসীম হিন্দু শাস্ত্রের উপর বক্তৃতা দেয়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তার বক্তৃতার সর্বোচ্চ ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতার অন্যতম হাতিয়ার। তিনি ভারতীয় দর্শনের উপর গুরুত্ব বিশেষ দরবারে তুলে ধরেছিলেন।

জীবনাবাসন:

ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন দীর্ঘকালীন অসুস্থতার পর ১৮৭৫ সালে একই এপ্রিল চেন্নাইতে মারা যান। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান সর্বদা প্রশংসিত।

৫ই সেপ্টেম্বর ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জন্মদিন উপলক্ষে ওনাকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে।  ওনার জীবনের কিছু কথা আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরেছি। আমাদের এই ওয়েবসাইটে তরফ থেকে সকল শিক্ষকদের আমি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই। সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আমি এটাই বলব শিক্ষা গুরুই হচ্ছে আসল গুরু। তাই সকল ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের শিক্ষকদের আদেশ মেনে চলা উচিত। কারণ ওনারাই তোমাদেরকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবে।

 

সাহায্যকারী মনেসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে যদি আপনার  হয়। তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধু, বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে পোস্টটি শেয়ার করে দেবেন।

।।ধন্যবাদ।।


Discover more from educenters.in

Subscribe to get the latest posts sent to your email.