ভারতের প্রাকৃতিক ভূগোল

হিমালয় পর্বতমালা 


WBCS:ভারতের প্রাকৃতিক ভূগোল:হিমালয় পর্বতমালা : হিমালয় পর্বত মালা হিমাদ্রী, হিমবন বা হিমাঞ্চল নামে পরিচিত। হিমালয় হল নবীনতম ভঙ্গিল পর্বতমালা, হিমালয়ের পূর্ব- পশ্চিমে সিন্ধু নদ থেকে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত বিস্তৃত। টেথিস সাগরের অভ্যন্তরে আন্ত:মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে এটা তৈরি হয়েছে। এই পর্বতমালা শীতল সাইবেরিয়ান বায়ুর থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষা করে। হিমালয় দৈর্ঘ্য 2400 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। হিমালয় প্রস্থের, স্থান অনুযায়ী পার্থক্য লক্ষ্যণীয় কাশ্মীরে হিমালয় প্রস্থ ৫০০ কিমি এবং অরুণাচল প্রদেশে হিমালয়ের প্রস্থ ২০০ কিমি।  

হিমালয়ের বিভাগসমূহ

হিমালয় পর্বত মালা দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীভাগ করা যায়_   1• দৈর্ঘ্য অনুযায়ী হিমালয় •হিমালয়ের সমান্তরাল পর্বত শ্রেণী •হিমালয়ের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য

হিমালয়ের সমান্তরাল পর্বতশ্রেণী

হিমালয় এর সমান্তরাল পর্বত শ্রেণীর পাঁচটি ভাগে বিভক্ত

1. ট্রান্স হিমালয়:

গ্রেটার হিমালয় উত্তরে ট্রান্স হিমালয় বা তিব্বতীয় হিমালয় ( যেহেতু বেশিরভাগ অংশই তিব্বতের অন্তর্গত) অবস্থিত। এটি হিমালয়ের সর্বপ্রাচীন অংশ। এই অঞ্চলের গড় প্রস্তু 40 কিমি গড় উচ্চতা 5,800 মিটার । কারাকোরাম ,জাস্কর ও লাদাখ পর্বত শ্রেণীগুলি এই অঞ্চলে অবস্থিত। 5000 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট লাদাখ মালভূমিটি পর্বত শ্রেণী উত্তর পূর্বে অবস্থিত। কারাকোরামকে বলা হয় “Black of High Asia”।

ট্রান্স হিমালয়ের হ্রদ সমূহ

[table id=42 /]  

ট্রান্স হিমালয়ের পর্বত শৃঙ্গ সমূহ

[table id=46 /]  

2. গেটার হিমালয় বা হিমাদ্রী:

ট্রান্স হিমালয়ের দক্ষিণে এবং হিমাচলের উত্তরে অবস্থিত হিমালয় গ্রেটার হিমালয়  বা হিমাদ্রি নামে পরিচিত। এর গড় উচ্চতা 6000 মিটার। এই পর্বত শ্রেণীটি পশ্চিম নাঙ্গাপর্বত থেকে পূর্বে নামচা বারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এই হিমাদ্রীই পাঁচটি পর্বত শ্রেণীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উঁচু এবং হিমালয়ের বিখ্যাত শৃঙ্গগুলি এখানে অবস্থিত, যেমন- মাউন্ট এভারেস্ট (8,848 মিটার) নেপালিভাষায় এভারেস্ট এর নাম সাগরমাথা ( আকাশের দেবী) তিব্বতিতীয়রা একে ডাকে চোমো লংমা নামে।

হিমাদ্রী হিমালয়ের অবস্থিত পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ

[table id=47 /]   কিছু উল্লেখযোগ্য গিরিপথ বুর্জিলা ও জেজিলা (শ্রীনগর ও লে এর মাঝখানে),  বরলাচা       (হিমাচল প্রদেশ) এবং শিপকিলা ( হিমাচল প্রদেশ) এবং শতদ্রু নদী শিপকিলা পাশের মধ্যে দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।  

3•  লেসার হিমালয়:

দক্ষিণের শিবালিক হিমলায়া ও উত্তরে গ্রেট হিমালয়ার মধ্যবর্তী অংশকে মধ্য হিমালয়া বা হিমাচল হিমালায়া বা লেসার হিমালয়া বলে।  এই অঞ্চলে3300 থেকে 4500 মিটার পর্যন্ত উচ্চতার তারতম্য দেখা যায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্বতশ্রেণী হল- পীরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণী,ধৌলাধর পর্বতশ্রেণী,  মুসৌরি পর্বতশ্রেণী, নাগ টিব্বা ও নেপালের মহাভারত পর্বত শ্রেনী। কাশ্মীর উপত্যকা, হিমাচল প্রদেশের কুলু ও কাংড়া উপত্যকা পীরপাঞ্জাল পর্বত শ্রেণীর অন্তর্গত। কৃষাণগঙ্গা , ঝিলাম ও চেনাব নদীগুলি এই পর্বত শ্রেণীকে অতিক্রম করে বয়ে চলেছে। এই পর্বত শ্রেণীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথ হল_ পীরপাঞ্জাল, গোলাব ঘর এবং বানিহাল গিরিপথ। গেটার হিমালয় ও লেসার হিমালয়ের মধ্যে দুটি উন্মুক্ত উপত্যকা গড়ে উঠেছে: কাশ্মীর উপত্যকা ও কাঠমুন্ডু উপত্যকা। এগুলি  হ্রদের পলি দ্বারা তৈরি হয়। ডাল লেক এবং কাশ্মীরের উলার হ্রদ তার প্রমাণ। লাহুল স্পিতি এবং কুল্লুর উপত্যকা গেটার এবং লেসার হিমালয়ের মধ্যে অবস্থিত। লেসার হিমালয় চালে ছোট ছোট তৃণভূমি পাওয়া যায়। কাশ্মীরে এদের বলা হয় মার্গ; গুলমার্গ  সোনা মার্গ ইত্যাদি এবং উত্তরাখণ্ডে বুগিয়াল এবং পেয়ার। কাশ্মীর উপত্যকার কারেওয়াস হলো হিমবাহী কাদামাটি ও অন্যান্য উপাদান এমবেডেড moraines _ এর পুরু আমানত। এগুলি হলো অসংহত ল্যাকাস্ট্রিন- এর আমানত। ল্যাকুস্ট্রিন – এর অর্থ হল ”  হ্রদের সাথেে যুক্ত”। কাশ্মীর উপত্যকায় জাফরান চাষের জন্য কারেওয়া ফারম্যশন খুব উপযোগী।  

4•  শিবালিক পর্বত শ্রেণী:

হিমালয়ের নীচের প্রান্তীয় পর্বতশ্রেণীকে শিবালিক পর্বতশ্রেণী বলে। যার 900 থেকে 1200মিটার পর্যন্ত উচ্চতার তারতম্য দেখা যায়। শিবালিক পর্বত শ্রেণীকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে জানা যায়। জম্মুতে জম্মু পর্বত, হিমাচল প্রদেশে শিবালিক পর্বত, এবং অরুণাচল প্রদেশে মিরি,ডাফলা, আবর ও মিশমি পর্বত নামে পরিচিত। উত্তরাখণ্ডে ডুন্ডা পর্বতশ্রেণীও শিবালিকের একটি অংশ। শিবালিকপর্বত শ্রেণীর উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলি হ্রদ থেকে সৃষ্টি হয়ে সমতলভূমি গঠন করেছে। পশ্চিমে এই সমতল ‘ দুণ’ এবং পূর্বে এটাই ‘ডুয়ার্স’ নামে পরিচিত এই সমভূমির সমচেয়ে ভালো উদাহরণ হল উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন।  

5•  পূর্বাঞ্চল বা পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল:

ডিহাং জর্জ পেরানোর পর হিমালয়া হঠাৎই দক্ষিণামুখী হয়েছে এবং এক অর্ধচন্দ্রাকৃতি বিশিষ্ট তুলনামূলক নীচু পাহাড়ের সৃষ্টি করেছে যার উত্তর অংশ পশ্চিমেঢালু হয়ে নেমে গেছে। এই পাহাড়গুলিকে পূর্বাঞ্চল বলে। উত্তরে দাফাবুম (4578mt) নামক উঁচু পাহাড়িভূমি রয়েছে। উত্তরে পাটকাই বুম, অরুণাচল প্রদেশ এবং মায়ানমারের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা গঠন করেছে। পাটকাই বুম ইন্দ্রো -বর্মা সীমানা বরাবর কিছু দূরে যাওয়ার পরে দাফা বুমের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু হয়। নাগাল্যান্ডের সরামতি শৃঙ্গ (3826মিটার) হল এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। মিজোরামে অবস্থিত নিজে পাহাড়ের সর্বগ্ন চ্চ শৃঙ্গ হল- (ব্লু মাউন্টেন) বা নীলপর্বত (উচ্চতা 2157মিটার)

B•
হিমালয়ের আঞ্চলিক বিভাগ:

স্যার সিডনি বুরার্ড , নদী উপত্যকার ভিত্তিতে হিমালয়ের সমগ্র দৈর্ঘ্যকে চারটি ভাগে বিভক্ত করেন। [table id=49 /]

1. পাঞ্জাব হিমালয়:

পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই হিমালয় পূর্ব থেকে দক্ষিণ পূর্বে 560 কিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। গুরুত্বপূর্ণ পর্বতশ্রেণী হল: জাস্কর পর্বতশ্রেণী, পীরপাঞ্জাল পর্বত শ্রেণী, শিবালিক পর্বত শ্রেণী, লাদাখ পর্বতশ্রেণী প্রভৃতি। একে কাশ্মীর হিমালয়া বা হিমাচল হিমালয় বলে।

2. কুমায়ুন হিমালয়:

সাধারণত এই উচ্চতা পাঞ্জাব হিমালয়ের থেকে বেশি। এর মধ্যে অবস্থিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ গুলি হল- নন্দা দেবী, বদ্রিনাথ, কামেত, ত্রিশূল ,কেদারনাথ ,গঙ্গোত্রী প্রভৃতি। এর পশ্চিম প্রান্তীয় অঞ্চল হল-গাড়ওয়াল হিমালয়।

3. নেপালয় হিমালয়:

বিশ্বের কিছু উচ্চতম শৃঙ্গ গুলি এই হিমালয়ের অন্তর্গত সেগুলি হল-মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাকালু, অন্নপূর্ণা প্রভৃতি।

4. আসাম হিমালয়:

আসাম হিমালয় নাম হলেও এর এলাকার সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ গুলি হল- নামচা বরওয়া, কুল্লু, কাঙ্গড়ি, চামোলার প্রভৃতি।

 


Discover more from educenters.in

Subscribe to get the latest posts sent to your email.