W.B.C.S মেইন পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য question paper
ভারতের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভূগোল
সূক্ষ্ম শিলার চুনের সঙ্গে বিভিন্ন জৈব পদার্থের সংমিশনের ফলে ভূত্বকের সবচেয়ে আবরণ সৃষ্টি হয় তাকে মৃত্তিকা বলে। মাটির গঠনের প্রক্রিয়াকে pedogenesis এবং মৃত্তিকা সম্পর্কিত শিলা বিদ্যাকে pedology বলে। • অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে যে পরিণত বা আদর্শ মাটির সৃষ্টি হয়, সেই মাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে নিচে মূল বা আদি শিলাস্তার পর্যন্ত লম্বচ্ছেদ করলে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে কয়েকটি স্তর গড়ে উঠতে দেখা যায়, একে মাটির পরিলেখ বাস্তবায়ন বলে। এই প্রধান স্তর গুলি কে বলে হরাইজন, সেগুলি আবার কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। একটি আদর্শ পরিলেখকে ‘o’, ‘A’, ‘B’, ‘C’, এবং R প্রভৃতি হরাইজনে ভাগ করা হয়।
'O' হরাইজন বা জৈব স্তর: ভূপৃষ্ঠের ঠিক উপরের গাছপালা ও জীবজন্তুর দেহাবশেষ এবং এদের থেকে বিশেষিত পদার্থ গুলি সঞ্চিত হয়। একে 'O' হরাইজন বলে।
'A' হরাইজন:
এই স্তরটি প্রধানত খনিজ পদার্থ দিয়ে গঠিত। এছাড়া এই স্তরের উপরে হিউমাস বা জৈব স্তরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
'B'হরাইজন:
স্তরটি প্রধানত লোহা, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য লবণ, কাদাকনা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি নিয়ে গঠিত।
'C' হরাইজন:
‘B’ হরাইজন এর নিচে এবং মূল শিলা বা Bed rock এর উপরে আবিহাকারের ফলে উৎপন্ন বিভিন্ন আকৃতির পাথরের টুকরো দিয়ে স্তরটি গঠিত।
'R' স্তর (মূল বা আদিশিলা):
C হরাইজনের জন্য নিচে থেকে এই অঞ্চলের মূল শিলাস্তর। এই মূল শিলার ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য যেখানে উৎপন্ন মাটির বৈশিষ্ট্য কি প্রভাবিত করে।
• মাটির খনিজ উপাদানগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় যথা_ প্রাথমিক খনিজ, এবং পরিবর্তিত খনিজ।
প্রাথমিক খনিজ:
মাটির বড় আকারে দানাগুলির মূল শিলা খনিজের একটি অংশ তাদের বৈশিষ্ট্য বহন করে। আবিহাকেরর ফলে মূল সীমা ভেঙে আলগা হয়ে যায় এবং খনিজের মধ্যে কিছু মূল খনিজ রূপে ভেঙে আলাদা হয়ে যায়। এই শ্রেণীর কোনা গুলি হল কোয়াটজ, ফেলসপার, অলিভিন, পাইরক্সিন, অভ্র ইত্যাদি।
পরিবর্তিত খনিজ:
রাসায়নিক আবহিকারের মাধ্যমে সিলিকা, লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড প্রভৃতি পরিবর্তিত হয়ে আলাদা পরমানবিক গঠনের খনিজ কি কেলাস তৈরী হয়। এই ধরনের খনিজ গুলির মধ্যে প্রধানত কদর্ম খনিজ (কেওলিনাইট, ইলাইট, মন্টমরিলোনাইট, ভার্মিকুলাইট), যা সিলিকেট অ্যালুমিনা যৌগ ও কেলাস গঠনযুক্ত হয়। মাটির তৈরি হবার মধ্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া জড়িত আছে, যেমন- আবাহিকার (weathering) স্থানচ্যুতি ( translocation)-প্রস্তরীভবন (calcification), প্রস্তর চূর্ণ হওয়া, পডজলাইজেশন প্রভৃতি।
এছাড়া মাটি তৈরি নিয়ন্তকের অন্যান্য উপাদান গুলি হল_
1. মূল উপাদান
2. জলবায়ু
3. জীবদেহ
• উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদ, রং ও জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে ভারতের মাটিকে ICR (Indian council of Agriculture Re- search . আটটি বড় বিভাগে ভাগ করেছেন_
1.পলিমৃত্তিকা:
এই মাটির উত্তরের সমভূমি, শতদ্র, গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র সমভূমি, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদীর উপত্যকা ও ব-দ্বীপ এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলে পাওয়া যায়। সাধারণত পটাশ, ফসফরিক অ্যাসিড, চুন এবং জৈব পদার্থ এই মাটিতে মিশ্রিত থাকে। তাই কৃষিকাজের এটি উপযোগী। ধান, গম, ইক্ষু, পাট,
1. ভাঙ্গর:
পুরাতন পাললিক মৃত্তিকা সঞ্চয়ের দ্বারা গঠিত। মূলত কাদামাটি নিয়ে গঠিত যা স্থানে স্থানে দোঁআশ এবং বেলে দোঁআশ নির্মিত পথ করে দেয়। এই অঞ্চলটি খাদার-এ শেষ হয়েছে।
2. খাদার:
এটি গ্রেট হিমালয়ের অনেক নদী কৃতক নিয়ে আসার সাথে পলি মৃত্তিকা সঞ্চায়ের ফলে সৃষ্টি হইয়াছে। এটি গাঙ্গেয় সমভূমির মৃত্তিকা উর্বর করছে।
3. ভাবর:
এটি শিবালিক পর্বত শ্রেণীতে বিরাজ করে। এটি নুড়ি এবং অপরিকল্পিত পলি নিয়ে গঠিত। এই অংশটি কৃষিকাজের পক্ষে অনুপযুক্ত।
4. তরাই:
এটি ভবার এবং দক্ষিণ অংশ বিরাজ করে। এটি জলাকীন এবং স্যাতস্যাতে অঞ্চল। উচ্চ বৃষ্টিপাতের কারণে পশ্চিমের তুলনায় পূর্বে পরিলক্ষিত হয়। এটি কৃষির পক্ষে উপযুক্ত। এই অঞ্চলের নাইট্রোজেন এবং জৈব পদার্থের দ্বারা সমৃদ্ধ কিছু ফসফেট এর অভাব দেখা যায়।
2. কৃষ্ণ মৃত্তিকা:
এই মৃত্তিকা রেগুর মৃত্তিকা নামে অধিক পরিচিত। লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলার অববাহিকারের ফলে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে। এই মৃত্তিকায় সাধারণত চুন, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি পটাস মিশ্রিত থাকে। এই মৃত্তিকার প্রধানত ফসল হলো কার্পাস, এছাড়াও তামাক, গম, জোয়ার, তৈলবীজ, মিলেট প্রভৃতি চাষ হয়। দাক্ষিণাত্য লাভা মালভূমির উত্তর-পশ্চিম ডোকান এইসব অঞ্চল, প্রধানত মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটকের উত্তরাংশ, অন্ধপ্রদেশ ও গুজরাট ও তামিলনাড়ু প্রভৃতি অঞ্চল জুড়ে এই মৃত্তিকার অবস্থান করছে।
3. লাল এবং হলুদ মৃত্তিকা:
এই মৃত্তিকা আকিয়ান, প্রিক্যাম্বিয়ান যুগের গ্রানইট, নিস ও কয়োটজাইট শিলার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে, সেই মৃত্তিকায় অতি অল্প পরিমাণে নাইট্রোজেন, জৈব পদার্থ এবং ফসফরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই মৃত্তিকা অনুর্বর প্রকৃতির। তবে বর্তমানে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে এই মৃত্তিকার যুক্ত অঞ্চলে ভুট্টা, বাজরা, তৈলবীজ প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়। এই মৃত্তিকা সাধারণত উড়িষ্যা, ছত্রিশগড়, মধ্য গঙ্গা সমভূমি দক্ষিনাংশে লক্ষ্য করা যায়।
4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা:
উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে সাধারণত এই মৃত্তিকা লক্ষ্য করা যায়। এই মৃত্তিকাতে লৌহ অক্সাইড, বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ, ফসফেট এবং ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা কাজুবাদাম চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। সাধারণত মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ু অঞ্চলে এই প্রকার মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়।
5. মরু মৃত্তিকা:
এই মৃত্তিকা সাধারণত বালুকাপূর্ণ ও লবণাক্ত প্রকৃতির হয়। এই মিত্রিকা অল্প পরিমাণ হিউমাস ও জৈব পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়। এই মৃত্তিকা সাধারণভাবে কৃষি কাজের পক্ষে অনুপযোগী, তবে উপযুক্ত পরিমাণে জলসেচ ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে মিলেট, বার্লি, মাজ প্রভৃতির শস্য উৎপাদন করা যায়। এই মৃত্তিকা দেখা যায় সাধারণত রাজস্থান আরাবল্লীর পশ্চিমে, গুজরাটে উত্তরাংশে সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ অঞ্চলে, হরিয়ানার পশ্চিমাংশে এবং পাঞ্জাবের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে।
6. লবণাক্ত মৃত্তিকা:
এই মৃত্তিকা বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন_ রে, উশর, কল্লার, থুর প্রভৃতি। এই মৃত্তিকাতে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রধানত সুন্দরবন অঞ্চলে কচ্ছেরণ অঞ্চলে এই মৃত্তিকা লক্ষ্য করা যায়। এই মাটি কৃষিকাজের পক্ষে অনুপযুক্ত।
7. পিট ও জলাভূমি অঞ্চলের মাটি:
অধিক বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ আদ্রতা যুক্ত অঞ্চলে এই মৃত্তিকা লক্ষ্য করা যায়। এই মিত্রিকায় হিউমাস এবং জৈব পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত উত্তর বিহার, উত্তরাখণ্ডের দক্ষিনাংশ, পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চল, ওড়িশা, তামিলনাড়ুর অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। এই প্রকারের মৃত্তিকা সাধারণত ধান ও পাট চাষের জন্য উপযোগী।
8. পার্বত্য মৃত্তিকা:
এই মৃত্তিকা প্রধানত পর্বতের ঢাল যুক্ত অঞ্চলে যেখানে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, সেই অঞ্চলের লক্ষ্য করা যায়। এই মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি। পটাশ ও ফসফরাস এবং চুনের পরিমাণ কম। তাই এই মৃত্তিকা অনুর্বর প্রকৃতির। তবে সার প্রয়োগ উর্বর হয়। তবে এই মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও চা, কফি, বিভিন্ন ঔষধি দব্য, বিভিন্ন প্রকার ফল প্রভৃতি চাষ হয়।
Discover more from educenters.in
Subscribe to get the latest posts sent to your email.